এক প্রবাসী ভাই বাংলাদেশ থেকে হাত ব্যাগে মধু নিয়ে কাতার যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকায় বিমানবন্দরে সেটি নিতে দেয়া হয়নি।






তো সেই প্রবাসী ভাই রাগে ক্ষো’ভে আমাকে বললেন, বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে শুধু প্রবাসীদের মধু ধরা পড়ে। দেশ থেকে শতকোটি টাকা পা’চার হয় তখন স্কেনিং মে’শিনে ধরা পড়েনা কেন?
এই একই প্রশ্ন আমি অনেক প্রবাসীর মুখ থেকে শুনেছি। তবে উত্তর দেয়ার আগে আমি প্রবাসী ভাইকে বললাম, আপনার কি মনে হয়, যারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পা’চার করে,তারা টাকা বস্তায় ভরে, প্লেনে চড়ে বিদেশে টাকা নিয়ে যায়? না, পা’চারকারীরা বস্তায় ভরে প্লেনে করে টাকা নেয় না। বিদেশে এই যে টাকার পা’চার হচ্ছে, এই কাজে সব চেয়ে বেশি সহযোগিতা করছেন আমাদের প্রবাসী ভাই ও বোনেরা। আমাকে গা’লি দেবার আগে, লেখাটি পুরো পড়ুন।






উত্তর হচ্ছে, বিদেশ টাকা পা’চার করার অনেক রকমের পথ আছে। তবে অনেক বেশি টাকা দ্রুত পা’চারের সহজ প’দ্ধতি হচ্ছে হু’ন্ডি। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি, বাংলাদেশ থেকে একজন লোক ১০০ টাকা পা’চার করবে। তিনি হু’ন্ডি ব্যবসায়ীকে টাকা দিলেন। আর বললেন সৌদি, দুবাই, কাতার, কুয়েত যেখানেই হোক, তাকে ৯০ টাকা দিলেই হবে। আপনি সৌদি থেকে ১০০ টাকা হু’ন্ডি ব্যাবসায়ীর কাছে দিলেন। সেই হু’ন্ডি ব্যবসায়ী আপনার টাকা নিয়ে পা’চারাকারীর সৌদি আরবের ব্যাংকে কিংবা তার লোকজনের হাতে দিয়ে দিবে।
অন্যদিকে দেশে পা’চারকারীর সেই অ’বৈধ টাকাগুলো থেকে আপনার পরিবারের কাছে দিয়ে দিবে। ১০ টাকা লাভ থেকে আপনাকে দিবে ৫ টাকা দিয়ে ১০৫ টাকা আপনার পরিবারের কাছে দিবে। প্রবাসীরা জেনে কিংবা না জেনে হু’ন্ডিতে টাকা পাঠান, আর টাকা পা’চারকারী, চো’রাকারবারীদের লেনদেনে সহায়তা করছেন। হু’ন্ডিতে টাকা পাঠালে আপনার ৫ টাকা লাভ হচ্ছে, কিন্তু ক্ষ’তি হচ্ছে আরও বেশি। কিভাব?






হু’ন্ডির কারণে দেশে ডলার আসছেন না। আর ডলারের দাম বাড়ায় টাকার মান কমছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ডলার সংক’টে দেশে অর্থনীতি সংক’টে। ধরুন, দেশ আপনার পরিবারকে হু’ন্ডিতে ১০৫ টাকা পাঠালেন। কিন্তু আগে মাসে ৯০/১০০ টাকা হলে হতো। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে এখন তাদের মাসে ১২০/১৫০ টাকা দরকার। ফলে অতি’রিক্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়াতে আপনার সংসারে টানাটা’নি হচ্ছে, ঋণ করতে হচ্ছে। তাহলে নিজেই বুঝে নিন, হু’ন্ডিতে কার লাভ, আর কার ক্ষ’তি।
প্রবাসী ভাই ও বোনেরা, বিদেশ যাত্রা থেকে শুরু করে আবার দেশে ফেরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই নানা রকম ভোগা’ন্তি, প্র’তারণা’র মধ্যে পড়েন। দূতাবাস, পাসপোর্ট অফিস, বিমানবন্দরেও তাদের ভো’গান্তির মুখোমুখি হতে হয়। আগের চেয়ে ভোগা’ন্তি কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। এমন পরিস্থিতির প্র’তিবাদে অনেকে বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর বদলে হু’ন্ডিতে টাকা পাঠানোর কথা বলছেন। আপনার প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন আছে, থাকবে।






তবে প্রতিবাদের প’দ্ধতি বদলান। এমন পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করবেন না, যাতে চো’রাকারবারি, টাকাপা’চারকারীরা লাভবান হয়। আর ক্ষতি আপনার ও আপনার পরিবারের হয়। যে কথা বলে শেষ করবো। আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষে’ত্রে আপনি হাত ব্যাগে ১০০ মিলি গ্রামের বেশি কোন রকম তরল নিতে পারবেন না। এটা মধু হোক আর খাবার পানি হোক। বাংলাদেশে হোক আর বিশ্বের অন্য যে কোন বিমানবন্দর হোক। ফলে হাত ব্যাগে তরল নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
লেখা: চৌধুরী আকবর হোসেন সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলা ট্রিবিউন